চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পুলিশের সঙ্গে কিডনি ডায়ালাইসিস রোগী ও তাদের স্বজনদের সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার মোস্তাকিমকে জামিন দেননি আদালত। একই সঙ্গে তাকে কারা ফটকে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (১২ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. অলি উল্লাহর আদালত এ আদেশ দেন।
বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন মোস্তাকিমের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান। তিনি বলেন, ‘মানবিক আন্দোলন থেকে গ্রেপ্তার মোস্তাকিমের জামিন আবেদন করা হয়েছিল। আদালত জামিন নামঞ্জুর করেছেন। মামলার আইওর রিমান্ড আবেদনও নামঞ্জুর করে তাকে কারা ফটকে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে আদালত তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন তলব করেছেন।
জানা গেছে, ডায়ালাইসিস ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে চমেক হাসপাতালে কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ করে আসছিলেন রোগীরা। মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) তারা হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আন্দোলনকারীদের সড়ক ছেড়ে দিতে অনুরোধ করে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা সড়ক না ছাড়ার ঘোষণা দেন। একপর্যায়ে পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিন উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তিনি নিজের সেলফোন বের করে বিক্ষোভকারীদের ভিডিও করেন এবং তাদের পরে দেখে নেবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন। এরপর একযোগে সবাই ওসির বিরুদ্ধে হইচই শুরু করেন এবং ভিডিও ডিলিটের দাবি জানান।
গ্রেপ্তার মোস্তাকিমও ওসির সেই মোবাইল সরিয়ে নিতে চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে হাতাহাতিতে ওসির মোবাইল মাটিতে পড়ে ভেঙে যায়। এরপর ওসি মোস্তাকিমকে পেটাতে পেটাতে তিনি চমেকের প্রধান ফটকের বিপরীতে এপিক হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেও তাকে আরেক দফা মারধর করা হয়। কিছুক্ষণ পর এপিকের সামনে থেকে আরও একজনকে ওসি ধরে ভেতরে নিয়ে যান। পাশাপাশি অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেন।
একপর্যায়ে একজনকে ছেড়ে দিলেও মোস্তাকিমকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। তবে মোস্তাকিম আন্দোলনে থাকলে তার মা তখনও চমেক হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করাচ্ছিলেন। হাসপাতালে থাকতে তিনি শুনেন তার ছেলেকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। কান্না করতে করতে তিনি হাসপাতাল থেকে সরাসরি পাঁচলাইশ থানায় চলে যান। সেখানে গিয়েও তিনি পুলিশ কর্মকর্তার মন গলাতে পারেননি।
এরপর ওই দিন রাতে সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচলাইশ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। এতে আসামি করা হয় মোস্তকিমকে। এছাড়া মামলাটিতে অজ্ঞাতনামা ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করা হয়। এতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর হামলা ও কর্তব্য কাজে বাধা প্রদানের অভিযোগ আনা হয়।
জানা গেছে, ভারতের প্রতিষ্ঠান স্যান্ডর চমেক হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপন করে। প্রতিষ্ঠানটি এতদিন ধরে সরকারিভাবে প্রতি সেশনে ৫১০ টাকা ও বেসরকারিভাবে ২ হাজার ৭৮৫ টাকা করে নিয়ে আসছিল। কিন্তু এখন সেটা বেড়ে সরকারিভাবে ৫৩৫ ও বেসরকারিভাবে ২ হাজার ৯৩৫ টাকা হয়েছে। এর প্রতিবাদে কিডনি রোগীরা আন্দোলনে নামেন।
ভিন্নবার্তা ডটকম/এন
© All rights reserved © 2025 Jatiyokhobor.com
Leave a Reply