মাহমুদা মাসুম
স্কাউটিং বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত শিশু, কিশোর ও যুবদের জীবন গঠনে ও দেশ প্রেম জাগ্রত করার একটি আন্দোলন। বিশেষ করে একটি শিশু স্কাউটিং করলে সমাজে সে কোন খারাপ কাজে লিপ্ত হতে পারে না। সে ভালো কাজগুলো করার চেষ্টা করে। স্কাউট আন্দোল ১৯০৮ সালে লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল শুরু করেন। তিনি ছিলেন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর একজন অবসর প্রাপ্ত ল্যাফটেনেন্ট জেনারেল। বর্তমানে পৃথিবীর ১০০ কোটি স্কাউট ও গাইড বিভিন্ন স্কাউটিং সমিতির প্রতিনিধিত্ব করছে। মূলত তিনিই স্কাউট আন্দোলন প্রবক্তা তাঁর পুরো নাম রবার্ট স্টিভেন্সন স্মিথ লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল অব গিলওয়েল। স্কাউটদের মাঝে তিনি বি.পি নামে পরিচিত। ১৮৫৭ খ্রিঃ ২২ ফেব্রুয়ারি জন্ম গ্রহণ করেন এবং তারই হাত ধরে ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে স্কাউটিং আন্দোলনের সূত্রপাতম ঘটে। তাই ফেব্রুয়ারি দিনটিকে বিশ্ব ব্যাপী সস্কাউট দিবস হিসেবে পালিতম হয়। ব্যাডেন পাওয়েল এর বাব ছিলেন, অক্সফোর্ড এর প্রফেসর আর এইচজি পাওয়েল ও মা হেনরিয়েটা গেসা। ১৯৪১ সালে ৮৩ বছর বয়সে ৮ জানুয়ারি মৃত্যু বরণ করেন। কাব স্কাউটিং এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে শিশু, কিশোর, কিশোরীদের শারীরিক, মানসিক, নৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক এবং সামাজিক গুণাবলী উন্নয়নের মাধ্যমে তাদেরকে পরিবার, সমাজ দেশ তথা বিশ্বের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা।
বাংলাদেশ স্কাউট আন্দোলন প্রধানত তিনটি শাখায় বিভক্তঃ ১। কাব স্কাউটস – ৬ থেকে ১১ বছর। ২। স্কাউটস – ১১ থেকে ১৭ বছর। ৩। রোভার স্কাউটস ১৭ থেকে ২৫ বছর।
তবে রেলওয়ে, নৌ এবং এয়ার অঞ্চলের চাকরিজীবীদের জন্য ৩০ বছর পর্যন্ত বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে। স্কাউট কার্যক্রমে কতগুলি বৈশিষ্ট লক্ষণীয়- ” হাতে-কলমে কাজ শেখা। ছোট দল পদ্ধতিতে কাজ করা। ব্যাজ পদ্ধতির মাধ্যমে কাজের স্বীকৃতি প্রদান। মুক্তাঙ্গনে কাজ সম্পাদন। তিন আঙ্গুলে সালাম ও ডান হাতে করমর্দন। স্কাউট পোশাক, স্কার্ফ ও ব্যাজ পরিধান। সর্বদা স্কাউট আইন ও প্রতিজ্ঞা মেনে চলা।”
স্কাউটিং এর মত বা মুলমন্ত্র হল।
কাব-যথাসাধ্য চেষ্টা করা। স্কাউট সদা প্রস্তুত এবং রোভার- সেবাপ্রদান। বাংলাদেশ স্কাউটস হলো বাংলাদেশের জাতীয় স্কাউট সংগঠন। এই অঞ্চলে স্কাউটিং কর্মকান্ড শুরু ১৯১৪ সালে। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) স্কাউট এসোসিয়েশনের ব্রিটিশ ভারতীয় শাখার অংশ হিসেবে। পরে পাকিস্তান বয়-স্কাউট অ্যাসোসিয়েশনের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ স্বাধীনতার পূর্ব পর্যন্ত এখানে স্কাউটিংয়ের কার্যক্রম চলে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ স্কাউট অ্যাসোসিয়েশন নামে জাতীয় পর্যায়ে স্কাউটিং এর সংগঠণ গড়ে ওঠে। ১৯৭২ সালে ৮ এপ্রিল বাংলাদেশ স্কাউটিং সূচনা দিবস হিসেবে এ বছর থেকে ৮ এপ্রিল বাংলাদেশ স্কাউট দিবস উৎযাপন করা হচ্ছে। পিয়ার আলী নাজির প্রধান জাতীয় কমিশনার এবং তাজ উদ্দিন আহমেদ সভাপতি নিযুক্ত হন। তাদের নেতৃত্বে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ আন্তজার্তিক স্কাউট আন্দোলনের ১০৫তম হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল। পরে ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ স্কাউট এ্যাসোসিয়েশনের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বাংলাদেশ স্বকাউটস। ২০১৫ সালের হিসেবে বাংলাদেশে মোট স্কাউটের সংখ্যা ১৪,৭৪,৪৬০ জন। ১৯৯৪ সালের ২৪ মার্চ একাদশ সভায় বিশ্ব স্কাউট সংস্থার অনুমোদনক্রমে গাল-ইন-স্কাউটিং চালু করে বাংলাদেশ। স্কাউট কার্যক্রমে রয়েছে- সাপ্তাহিক ক্লাস, ক্যাম্প ও হাইকিং, কমডেকা এবং বড় সমাবেশ যথা ক্যাম্পুরি (কাবদের), জাম্বুরি (স্কাউটদের) এবং (রোভারদের) আয়োজন করা হয়ে থাকে জাতীয়, আঞ্চলিক, জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে (এগুলি আন্তজার্তিকভাবে) বিশ্ব স্কাউট সংস্থাও করে থাকে।
এছাড়া বিভিন্ন সমাজ উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বিভিন্ন গ্রুপ ও জেলা পর্যায়ে গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে- বৃক্ষরোপন, টিকাদান, স্যানিটেশন, ও পরিবেশ সংরক্ষণ, জ্বালানী সাশ্রয়ী চুলা এবং বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় স্কাউটদের সেবাদান কর্মসূচি বাংলাদেশের মানুষ সর্বদাই শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। স্কাউটদের এ সকল কার্যক্রম এবং বিভিন্ন ট্রেনিং এর বিভিন্ন ব্যাজ প্রদানের মাধ্যমে স্বীকৃতি দেয়া হয়।
স্কাউটের তিনটি শাখার জন্য সর্বোচ্চ ব্যাজ হচ্ছে- • শাপলা কাব প্রেসিডেন্ট’স স্কাউট এবং • প্রেসিডেন্ট’স রোভার স্কাউট। অ্যাডান্ট লিডারদের স্কাউটিং এ অবদান রাখার জন্য তাদেরকেও বিভিন্ন অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। এর মধ্যে সর্বোচ্চ হচ্ছে রৌপ্য ব্যাঘ্র এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হচ্ছে রৌপ্য ইলিশ। বিশ্ব স্কাউট সংস্থাও বিভিন্ন দেশের অসাধারণ স্কাউটদের দিয়ে থাকে ব্রোঞ্জ উলফ ব্যাজ। তবে এ ব্যাজ খুব কম সংখ্যক স্কাউটই পেয়ে থাকেন। ১৯৩৫ সনের ২ আগস্ট লর্ড ব্যাডেন পাওয়েলকে সর্বপ্রথম এই ব্যাজ প্রদান করা হয়েছিল।
© All rights reserved © 2025 Jatiyokhobor.com
Leave a Reply